দেশের বিভিন্ন জায়গার গত তিন দশকে বনভূমি যেভাবে কমেছে একই সঙ্গে কমেছে মধুপুরগড় এলাকার বনভূমি। সেই সঙ্গে বন থেকে হারিয়ে গেছে চেনা-অচেনা ফুল, ফল, লতা, পাতা ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। তিন দশক আগেও শিশু-কিশোরদের কাছে জনপ্রিয় ছিল বুনোফল ‘আনাই’। বন-জঙ্গল কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ‘আনাই’ ফল আজ বিলুপ্তপ্রায়।
একসময় বুনোফল আনাই হাটে-বাজারে বিক্রি করতে দেখা যেত। বিক্রেতারা পাহাড়ের ঝোপ জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে আনাই ফল সংগ্রহ করে হাটে-বাজারে নিয়ে যেত। পাকা আনাই ফল দেখতে দুধ সাদা বা হালকা গোলাপি সাদা। আগেকার দিনে বাজারে এক টাকা থেকে দুই টাকা সের দরে বিক্রি হতো আনাই ফল।
আবার জঙ্গল ঘুরে শিশু কিশোররা ফলটি সংগ্রহ করে খেত।
প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন করার পর থেকে অন্যান্য উদ্ভিদের সঙ্গে এই উদ্ভিদটিও হারিয়ে গেছে। তাই একসময় ঝোপ-জঙ্গলে আনাইগোটা গাছ দেখা গেলেও এখন সারা পাহাড় খুঁজেও এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
সম্প্রতি ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকা ঘুরতে ঘুরতে উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নে মধুপুরচালা গ্রামে গিয়ে দেখা মিলল একটি আনাগোনা গাছের।
ওই গ্রামের সাগর কবিরাজের বাড়িতে পাকা সড়ক ঘেঁষে রয়েছে গাছটি। গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। পাকতেও শুরু করেছে।
সাগর মিয়া জানান, ফল আসলে ছোট ছোট শিশু ও স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা গাছ থেকে ফলগুলো পেরে খায় এবং বন জঙ্গলে গাছটি আর দেখা যায় না বিধায় গাছটি আমিও গাছটি কাটি না।
সাগর কবিরাজের মেয়ে বিথি স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বিথি বলে, ‘আমার সহপাঠী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা যখন আমাদের আনাই গাছের ফল খেতে আসে তখন খুবই ভালো লাগে। আমি ওদের জন্য ফল সংগ্রহ করে রাখি।’
মধুপুরচালা গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমাদের সময় সবাই আনাই ফল চিনত। বর্তমানে পাহাড়ে এ ফলের গাছ নেই বললেই চলে। আমাদের সন্তানরা গাছ তো চিনবেই না, কোনো দিন জানবেই না যে আনাই নামে কোনো ফল ছিল।’