নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নিত্যপণ্যের বাজারে অবশেষে কমতে শুরু করেছে বেগুন, শসা, লেবু ও টমেটোর দাম। দাম কমে প্রতিকেজি বেগুন মানভেদে ৫০-৭০, শসা ৬০-৭০, টমেটো ৬০-৮০ এবং লেবুর হালি মানভেদে ৩০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। রোজার শুরুতে এসব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। এছাড়া চাল, আলুর দাম বাড়লেও কমেছে পেঁয়াজ, রসুন ও ডিমের। আটা, চিনি, ছোলা ও মসুর ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেড়েছে মুরগি, মাংস ও মাছের দাম। সোমবার (১ এপ্রিল) টাঙ্গাইল শহরের পার্ক বাজার, ছয়আনি বাজার, সিটি বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চড়াদামে বিক্রি হওয়া লেবু, শসা, টমেটো, কাঁচামরিচ এবং বেগুনের দাম কমতে শুরু করেছে। রোজার প্রথম সপ্তায় এসব পণ্যের দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে কাঁচাবাজারে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের দাম আরও কমবে। বিশেষ করে বাজারে গ্রীষ্মকালীন শসা, ক্ষিরাই, টমেটো ও বেগুনের সরববরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, রোজার শুরুতে যেভাবে লেবু, শসা, টমেটো, বেগুন এবং কাঁচামরিচের দাম বেড়েছিল এখন আবার তা সেভাবেই কমতে শুরু করেছে। প্রতিকেজি শসা ও টমেটোর দাম কমেছে প্রায় ৩০-৪০ টাকা, লেবুর হালি মানভেদে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া দাম কমে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওই বাজারের সবজি ক্রেতা আমির হোসেন জানান, রোজার শুরুতে বাজার যেভাবে চড়েছিল এখন সেই অবস্থা নেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে।
এদিকে, রোজার মধ্যে এবার বেড়েছে চালের দাম। সম্প্রতি চালের দাম কমাতে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও কর ছাড় দেওয়া হলেও বাজারে সেইভাবে প্রভাব পড়েনি। রোজার আগে দাম স্থিতিশীল থাকলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির তথ্যমতে, দাম বেড়ে প্রতিকেজি মোটা জাতের স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৮-৫২, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫২-৫৬ এবং সরু নাজির শাইল ও মিনিকেটে মানভেদে ৬২-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১-২ টাকা করে বাড়ছে চালের দাম। খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, চালের দাম একটু বেড়েছে এটা সত্য। এর আগে চালের দাম কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এরপর কিছুটা কমে মাস দেড়েক স্থিতিশীল ছিল। এখন আবার মিল পর্যায়ে প্রতিবস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেেেড়েছ। পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, তাদের চাল কেনা দাম বেশি দিয়ে। অন্যদিকে মিলারদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে।
এদিকে, রোজার শুরু থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। প্রতিকেজি দেশী মুরগি ৬০০-৬৫০, সোনালি ৩৩০-৩৫০ এবং ব্রয়লার ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে সপ্তাহ ব্যবধানে দাম কিছুটা কমেছে। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চিনি প্যাকেট ১৪৫-১৫৫ এবং খোলা ১৪০-১৪৫, ছোলা প্রতিকেজি ১০০-১১০, মসুর ডাল ১২০-১৬০, সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারের ক্যান ৭৮০-৮০০, এক লিটারের ক্যান ১৬০-১৬৩, সয়াবিন খোলা প্রতিলিটার ১৪৮-১৫৫, পামওয়েল (খোলা) প্রতিলিটার ১২৫-১৩০, পামওয়েল (সুপার) ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
এদিকে নির্ধারিত দামে মিলছে না খেজুর। বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খেজুর পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিকেজি খেজুর মানভেদে ২০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রোজায় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দুই ধরনের খেজুরের দাম বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হতে দেখা যায়নি সেই দুই ধরনের খেজুর। বরং বাড়তি দামেই খেজুর বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। সম্প্রতি অতিসাধারণ মানের খেজুরের দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের দাম প্রতিকেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারের পাইকারি, খুচরা ও ভ্যানে করে বিক্রি করা খেজুরের দোকান ঘুরেও এই দুই খেজুর সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হতে দেখা যায়নি। বরং অতিসাধারণ মানর খেজুরের খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি থকে ২০০ টাকা এবং জাইদি খেজুরের প্রতিকেজি ২২০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।