নিজস্ব প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অকুতোভয় বীর সৈনিকের নাম শহীদ জামাল হোসেন। অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে তাঁর সমাধিস্থল, লাগেনি নেমপ্লেট। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত সংস্কার করার দাবি করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ জামাল হোসেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভার চামুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আব্দুল সরকার এবং মায়ের নাম ছাকিরন নেছা। তাঁরা দুই ভাই ও তিন বোন।
ছোটবেলা থেকেই জামাল হোসেন ছিলেন খুবই হাসিখুশি কিন্তু দুঃসাহসিক। তিনি ১৯৬৮ সালে কালিহাতীর রামগতি শ্রীগোবিন্দ (আরএস) পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।
১৯৭১ সালে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে দেশমাতৃকার টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কালিহাতী হাইস্কুল মাঠে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে জামাল হোসেন ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইল এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করতেন। এছাড়া তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সাহসের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কালিহাতী পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায় পাকিস্তানি হানাদাররা জামাল হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর শহীদ জামাল হোসেনকে নিজ গ্রাম চামুরিয়ায় কবর দেওয়া হয়।
সরেজমিনে শহীদ জামালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর কবরের ভেতরে ও চারপাশে জঙ্গলে ভরে গেছে। কবরের উত্তর ও পশ্চিম পাশের মাটি সরে গিয়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কবরে লাগানো হয়নি নেমপ্লেট।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারুল হক বাবুল বলেন, এত বড় মাপের এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর এভাবে অযত্নে থাকা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী খন্দকার মোখলেছুর রহমান মনি বলেন যাদের আত্মত্যাগে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের কবর এভাবে থাকতে পারে না। এটা আমাদের অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।
শহীদ জামাল হোসেনের ভাতিজা আব্দুল কাদের বলেন, কিছুদিন পূর্বে সরকারিভাবে কবরটি পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার কাজটি অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যায়। কবরে লাগানো হয়নি নেমপ্লেট। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দ্রুত কবরটির সংস্থার চাই।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, শহীদ জামাল হোসেনের কবরটি দ্রুত সংস্কার করা হবে।
উল্লেখ্য, শহীদ জামাল হোসেনের নামে কালিহাতী উপজেলার কালীবাড়ীতে শহীদ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ জামাল হোসেন হল ও শহীদ জামাল হোসেন স্মৃতিফলক এবং কালিহাতীর উত্তর বেতডোবায় শহীদ জামাল সড়ক রয়েছে।
সুত্র-কালেরকন্ঠ