নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া মামলার আসামির নামের সঙ্গে মসজিদের ইমামের বাবার নামের মিল রয়েছে। মধ্যরাতে পরোয়ানাভুক্ত আসামি আব্দুর রাজ্জাককে ধরতে গিয়ে ইমাম গোলাম রাব্বানীর বাড়িতে যায় একদল পুলিশ। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পুলিশ তাঁকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের আমুয়াবাইদ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনা জানাজানি হলে গতকাল শুক্রবার বিকেলে থানার সামনে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি আমুয়াবইদ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে যান উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক রুহুল আমিন, রুবেল রানা, আলমগীর হোসেন ও মিজানুর রহমান। কিন্তু ভুল করে স্থানীয় মসজিদের ইমাম গোলাম রাব্বানীর (২৭) বাড়িতে প্রবেশ করে পুলিশ। রাব্বানীর বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক মৃধা।
গোলাম রাব্বানীর ভাষ্য, রাত দেড়টার দিকে কারা যেন তাঁর বসতঘরের দরজায় খটখট শব্দ করে। দরজা না খুললে দরজা ভেঙে কয়েকজন লোক তাঁর বোনের কক্ষে প্রবেশ করে। ডাকাত ভেবে পাশের কক্ষে খাটের নিচে পলায়ন করেন তিনি (রাব্বানী)। পরে লোকগুলো পরিচয় দেয় তারা পুলিশ। থানা থেকে এসেছেন। এর পর খাটের নিচ থেকে তাঁকে টেনে বের করেন তারা। হাত ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন একজন। পেছন থেকে তাঁকে লাথি মারেন একজন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে কেন এভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন? এ প্রশ্নের জবাবে একজন বলেন, ‘তোর নামে মামলা আছে। তোর কারেন্ট বিল বাকি আছে। আমি বলি, ভাই আমারে মাইরেন না, আমি মসজিদের ইমাম, আমার কোনো কারেন্ট বিল বাকি নাই।
তখন পাশে থাকা একজন বলেন, তোরে ইমামতি শিখাইছে ক্যারা?’
রাব্বানী বলেন, ‘পরে আমি মামলার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা বলে আগে থানায় চল, তার পর কাগজপত্র দেখামু। এভাবেই প্রায় ২০ মিনিট চলে যায়। হইচই শুনে আশপাশের লোকজন এসে জড়ো হয়। মামলার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তাদের কাগজপত্র দেখায় পুলিশ।’
রাব্বানী বলেন, ‘কাগজপত্রে দেখা যায় মামলায় আসামির নাম আব্দুর রাজ্জাক। আমার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক মৃধা ঠিক আছে, কিন্তু আমার দাদার নাম লাল মাহমুদা মৃধা। আমার বাবার ভোটার আইডি কার্ড দেখালে এবং অনেক লোকজন চলে আসায় আমাকে রেখে চলে যায় পুলিশ। আমার নামে কোনো মামলা নেই, আমি একজন ইমাম পরিচয় দেওয়ার পরও আমাকে মারধর করার বিচার চাই।’
গোলাম রাব্বানীর প্রতিবেশী আলতাফ হোসেন (৪৫)। তিনি বলেন, ‘রাতে কোলাহল শুনে সেখানে গিয়ে দেখি একজন লোক রাব্বানীকে ধরে আছেন। আর বলতেছেন তোর নামে বিদ্যুতের মামলা আছে। পরে ভোটার আইডি কার্ড দেখালে গোলাম রাব্বানীকে ছেড়ে দিয়ে লোকগুলো আস্তে আস্তে সরতে থাকে। পরে জানতে পারি ওই লোকগুলো পুলিশ ছিল।’
এ বিষয়ে জানতে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করলে রিসিভ করেন। তবে সংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে মিটিংয়ে আছেন বলেই কল কেটে দেন।
ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়ার ভাষ্য, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে গ্রাম-পুলিশের তথ্যমতে থানা থেকে পুলিশ অফিসার যান। ইমামকে মারধর করার বিষয়টি সত্য নয়। তবে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হতে পারে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) মোহাম্মদ মোনাদির চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে থানায় বসে কথা বলেছি। মূলত বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে ইমামকে মারধরের বিষয়টি সত্য নয়।