নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে। একই সঙ্গে নয়টি সু-উচ্চ মিনার দিয়ে সজ্জিত একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স হিসেবে মসজিদটির নকশা করা হয়েছে। টানা ১১ বছর ধরে চলা মসজিদটির নির্মাণ কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
মসজিদটির পশ্চিমাংশে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে গেছে যমুনার শাখা ঝিনাই নদী। গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে এই মসজিদটি। জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে মসজিদটি নিয়ে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ইতোমধ্যেই ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলার হাজারো দর্শনার্থী ভীড় করছেন।
জানা যায়, মসজিদটি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে বিগত ২০১৩ সালের (১৩ জানুয়ারি) নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ কাজের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া খাতুন। কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত মেছের আলীর ছেলে। তারা ছয় ভাই, তিন বোন। রফিকুল ইসলাম সবার বড়। রফিকুল ইসলাম জনতা ব্যাংকের সিভিএ প্রেসিডেন্ট।
নানা নকশার মসজিদটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক একশ’ কোটি টাকা। এই মসজিদটি বিগত ২০১৭ সালে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে মসজিদটির নির্মাণ কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাবা শরীফের ইমাম মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়ে আসছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি গম্বুজ রয়েছে। এই বড় গম্বুজের চারপাশে ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে ২০০টি। এগুলোর প্রত্যেকটির উচ্চতা ১৭ ফুট। মূল মসজিদের চার কোণে রয়েছে চারটি মিনার। এদের প্রত্যেকটির উচ্চতা ১০১ ফুট। পাশাপাশি আরও চারটি মিনার রয়েছে ৮১ ফুট উচ্চতার। ৪৫১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৫৭ তলা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মিনার স্থাপন করা হবে। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের ভেতরে চার দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত রয়েছে পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরিফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে, দিনে বা রাতে যে কোন সময় মসজিদের দেয়ালে অঙ্কিত কুরআন শরিফ পড়তে পারবেন।
মসজিদের প্রধান ফটক নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল। আজান প্রচারের জন্য মসজিদে সবচেয়ে উঁচু মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও এতে সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত রয়েছে। মসজিদের পাদদেশে ২২ বিঘা জমির ওপর একটি সুদর্শন হেলিপোর্ট স্থাপন করা হয়েছে। এই হেলিপোর্টটি ইতোমধ্যে ধর্মমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। ১৫ বিঘা জমির ওপর বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্সটি অবস্থিত। মেহরাবের পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। এছাড়াও মসজিদের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে সু-বিস্তৃত আলাদা ভবন। ওই ভবনে থাকবে মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, এতিমখানা, দুস্থ নারীদের চিকিৎসার জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকছে বেকার যুবকদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার প্রকল্প। মসজিদে একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও ২২ জন খাদেম নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সিলেট থেকে মসজিদ দেখতে এসেছেন আবুল কাশেম। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও টিভিতে ২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা হয়নি। আমরা সিলেট থেকে মসজিদ দেখতে এসেছি পাঁচ বন্ধু মিলে। মসজিদের কারুকাজ অনেক সুন্দর। ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। এসে নামাজ পরলাম অনেক ভালো লাগলো। নিরাপত্তার ব্যবস্থা ভালো। দেখার মতো একটি মসজিদ। আরেক দর্শনার্থী সাদিয়া খাতুন বলেন, আমি ঢাকা থেকে এই মসজিদে দেখতে এসেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মানুষের মুখে এ মসজিদের নাম শুনেছি। আমাদের পাশের জেলা টাঙ্গাইলে এত সুন্দর একটা মসজিদ আছে না দেখলে বুঝতাম না। সারা বিশ্বের মধ্যে এরকম ২০১ গম্বুজ মসজিদ নাই। মসজিদ দেখে অনেক ভালো লাগলো। পরিবার নিয়ে নামাজ আদায় করেছি। মহিলাদের জন্য নামাজের সুন্দর ব্যবস্থা আছে। কতৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য ও তার ছোট ভাই আব্দুল করিম বলেন, আমার ভাই রফিকুল ইসলামের ব্যক্তি উদ্যোগে মসজিদটির কাজ শুরু করেন। আমার পরিবারের লোকজনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি আমাদের কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল ব্যতিক্রম কিছু করার। সেই চিন্তা থেকেই এই মসজিদের উদ্যোগ নেন। এছাড়াও মুসুল্লিরা দানবাক্সে দান করে যাচ্ছেন। এছাড়াও মসজিদটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারেরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। মসজিদটির নির্মাণ সামগ্রী দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে। এসব নির্মাণ সামগ্রী আনতে সরকারকে কোনো ভ্যাট দিতে হচ্ছে না। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদটির উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী উদ্বোধনের দিন তারিখ ঠিক করা হবে। ওই দিন পবিত্র কাবা শরিফের প্রধান ইমামও উপস্থিত থাকবেন।
এই মসজিদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, ২০১ গম্বুজ মসজিদে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওখানে পুলিশ বক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ২৪ ঘন্টা পুলিশ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও পর্যটকরা ওই এলাকায় অবস্থান করতে বা তাদের ধর্মী কাজ শেষ করতে কোন প্রকার সংকুচ বা বাঁধা নেই। আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।