মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

লাখ-কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার গুজব সখীপুরে

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

সখীপুরে ছড়িয়ে পড়েছে লাখ-কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার গুজব

 

সখীপুর প্রতিনিধি: ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন থেকে লাখ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে। কেউ জানে এককালীন, আবার কেউ জানে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে। তবে কারা এই টাকা দেবেন এ বিষয়ে নিশ্চিত নন কেউই।

এমন প্রলোভনে প্রতিদিন হাজারও মানুষ ছুটে যাচ্ছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বহুরিয়া গ্রামের মো: মনির হোসেনের বাড়িতে। সেখানে মনির, তার স্ত্রী এবং জাহাঙ্গীর নামে এক যুবক পূরণ করে নিচ্ছেন ঋণের ফরম। গত এক সপ্তাহ থেকে চলছে এ কার্যক্রম।

তবে স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। যা মানুষের ব্যক্তিগত অর্থ ও ঋণ দেয়ার নামে অর্থ সংগ্রহ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে বহুরিয়া গ্রামের আরফান হাজীর ছেলে মনির হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,  আশপাশের এলাকার অনেক নারী-পুরুষ ফরম পূরণের অপেক্ষায় রয়েছেন।

তার বাড়িতে বসেই ফরম পূরণ চলছে। নেয়া হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র কার্ডের (এনআইডি) নম্বর, মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষর।

ফরমের শিরোনামে উল্লেখ রয়েছে, বিপুল ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ‘অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা’ বরাবরে পুঁজির জন্য ঋণের আবেদন।’

‘ভ্যাট, ট্যাক্স, সেবার নামে জনগণ থেকে আদায় করা কোটি কোটি টাকার বড় অংশ লুটপাট ও বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অর্থ উদ্ধার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে বিনা সুদে, বিনা জামানতে, সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের মাধ্যমে পুঁজির জোগান দেয়ার কর্মসূচির আওতার ফল পেতে আগ্রহীদের আবেদনের ছক।’

স্থানীয়রা জানান, ঢাকার কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের নাম করে প্রতিজনকে এক লাখ থেকে কোটি টাকা করে ঋণ দেয়ার কথা জানান ওই  মনির।
এরপর থেকেই হাজার হাজার নারী-পুরুষ ওই বাড়িতে ছুটে আসছেন ফরম পূরণের জন্য।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাশের গ্রামের এক গৃহবধূ জানান , ‘এক সপ্তাহ আগে লোক মারফত জেনেছি, এক লাখ টাকা করে ঋণ দেয়া হবে। এ জন্য মোবাইল নম্বর ও ভোটার আইডি কার্ড নম্বর লাগবে। এ জন্য মনির ভাইয়ের কাছে এসে ফরম পূরণ করে দিলাম। আমার গ্রামের অনেক নারী এসে ফরম পূরণ করে গেছেন।’

কবে, কারা দেবে এই টাকা? এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুই জানি না বলে উত্তর দেন এই নারী।

ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া অন্তত ১০ জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধু বহুরিয়া ইউনিয়ন নয়, উপজেলার অনেক দূরের গ্রাম থেকেও মানুষ দলে দলে এসে বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার আশায় নিজেদের স্বাক্ষর এবং ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সরকার থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এসব ঋণ দেয়া হচ্ছে বলে তাদেরকে জানিয়েছে।

তারা আরো জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের আঞ্চলিক সংগঠক হিসাবে বেশ কিছুদিন ধরে তারা এ কাজ করছেন। গত দুই দিনে অন্তত এক হাজার মানুষের স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্রের(এনআইডি) নম্বর, মোবাইল নম্বর, ও জন্মতারিখসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।

ঋণের জন্য নাম লেখাতে আসা এক দিনমজুর জানান, জানতে পারি তারা দেশের পাচারককৃত অর্থ ফেরত এনে তা সাধারণ মানুষের মাঝে বিনা সুদে বিতরণ করবে। কবে নাগাদ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই চক্রের সংগঠক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এই টাকা পরিশোধের কোন সময়সীমা নেই। কিছুদিন পরেই নাকি সবাইকে নিয়ে একটা মিটিং করবে, সেখান থেকে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এই তরুণ উদ্যোক্তা জানান, তারা দাবী করছে ১২ বছর হলেও ঋণ প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে তথ্য নিচ্ছে এই চক্রের সদস্যরা। এছাড়া তাদের ব্যবহৃত লিফলেটে লেখা রয়েছে ” ফেসবুক এবং ইউটিউব খুলে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ লিখে সার্চ করে ১০ টি ভিডিও দেখুন এবং সাবস্ক্রাইব করুন। ভিডিও অন্যদেরকেও দেখান এবং তাদেরকে সাবস্ক্রাইব করতে অনুরোধ করুন। এসব লেখা দেখে আমি তুলনামূলক হতবাক হয়েছি। মনে হচ্ছে তাদের কার্যক্রমে কোন ঝামেলা রয়েছে। তবে দুইদিন আগে আমার বোনের(বাড়ি গাইবান্ধা) কাছ থেকে জানতে পারলাম, এটি নাকি একটি প্রতারক চক্র।

এসময় ওই চক্রের সদস্য মনির জানান, দেশের পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে তা সাধারণ মানুষের মাঝে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, আমাদের হেড অফিস মির্জাপুরের কাকলী মোড়। আমি এই এলাকার সংগঠকের দায়িত্বে আছি। ফরম পূরণ করা শেষ হলে আমরা কাগজপত্র হেড অফিসে পাঠিয়ে দিব। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে ঋণ প্রদান করা হবে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি অব বাংলাদেশের প্রধান কর্মকর্তা  আল হাসান মিলাদ বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য এবং  স্বাক্ষর  যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে দেয়া উচিত না। এগুলো ব্যবহার করে সাইবার জগতের অপরাধীরা আপনাকে ফাঁসাতে পারে।

বহুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি শুনেছি আমার ওয়ার্ডে একটি সংগঠন এরকম কাজ করছে। তবে কারা কোন বাড়িতে করছে তা জানা নেই।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ

The Trend (Online Shop)

©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights