মধুপুর ডেস্কঃ ছবির খোঁজে ঘাটাইলের বিভিন্ন জলাশয়ে ঘুরতে গিয়ে চোখে পড়ে বিরল প্রজাতির এই পাখিটি। পাখিটির নাম রঙিলা চ্যাগা, ইংরেজি নাম Greater Painted-snipe, বৈজ্ঞানিক নাম Rostratula benghalensis। এটি Rostratulidae পরিবারের অন্তর্গত।
পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে।
গত শনিবার সকালে ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী এলাকার কোদালধোয়া পুকুরে এই পাখিটি দেখা যায়। পাখিটি বেশ লাজুক প্রকৃতির। ঝোপ-জঙ্গল ঘেরা জলাশয় কিংবা নদীর তীরে বেশি দেখা যায়। এরা নিশাচর হলেও খুব ভোরে কিংবা শেষ বিকেলে শিকারে বের হয়। প্রকাশ্যে শিকারে বের হয় না বললেই চলে। নিরীহ প্রজাতির পাখি এরা। নিজেদের আড়াল করে রাখতে পছন্দ করে। ভয় পেলে দ্রুত দৌড়ে পালায়।
স্ত্রী পাখি দেখতে ভারী সুন্দর। পুরুষ পাখির সাথে এদের সংসার খুব অল্প দিনের। শুধু ডিম দেয়া পর্যন্ত। সংস্কৃত সাহিত্যে এরা ‘কুনাল’ পাখি নামে পরিচিত।
পাখিটির গড় দৈর্ঘ্য ২৭ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী পাখি লম্বায় খানিকটা ছোট। পুরুষ পাখির চিবুক, ঘাড়ের দু’পাশ গলা, বুক বাদামির ওপর সাদা ছিট। বুকের শেষে কালচে-সাদা পাট্টি। কণিনিকা বাদামি। ঠোঁটের ডগা সামান্য বাঁকানো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির রূপ ভিন্ন। ওপরের পালক ধাতব জলপাই সবুজের ওপর সামান্য হলুদ। তাতে রয়েছে কালচে ছোপ। চোখ বড় বড়। চোখের চারপাশে সাদা বলয়। বলয়টি চোখ ছাড়িয়ে ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। সাদাটে দাগ চিবুক গলা হয়ে বুকের উপরাংশে ঠেকেছে। বুকের নিচের দিকে কালচে থেকে সাদা হয়ে নিচের দিকে পৌঁছেছে। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখিরই লেজটা খাটো। তবে পা লম্বাটে।
প্রধান খাবার ঘাসের কচি ডগা, ঘাসের বীজ, পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন সময় গ্রীষ্ম থেকে বর্ষাকাল। এ সময় পুরুষ পাখি মাটির ওপর ঘাস লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। বাসা তৈরি হলে স্ত্রী পাখি দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ডিম রেখেই অন্য পুরুষ পাখির সাথে পালিয়ে যায়। পুরুষ পাখি ১৫ থেকে ২১ দিন ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে।
করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক সুমন মিয়া জানান, এই বিপন্ন প্রায় পাখিগুলোর খাদ্য এবং নিরাপদ বাসস্থান না থাকায় এদের অস্তিত্ব কমে যাচ্ছে। তাছাড়া জমিতে অধিক পরিমানে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীদের খাদ্য বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এসব বিপন্ন পাখি বা প্রাণীদের অস্তিত্ব রক্ষায় আরো সচেতন হতে হবে।